اعوذ بالله من الشيطان الرجيم -
بسم الله الرحمن الرحيم -
١ والعصر-
٢ إن الانسان لفى خسر-
٣ الا الذين أمنوا وعملوا الصلحت وتواصوا بالحق وتواصوا بالصبر-
অনুবাদ
এরশাদ হচ্ছে-
১। কালের শপথ :
২। নিশ্চয়ই সকল মানুষ ক্ষতির মধ্যে রয়েছে।
৩। কিন্ত তারা বাদে, যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে এবং পরস্পরকে হকের নির্দেশ দেয় এবং একে অপরকে ধৈর্য ধরার নির্দেশ দেয়।
পরিচয় : সুরা আল আসর আয়াত-৩ রুকু-১ সুরাটির প্রথম শব্দ العصر কে নিদর্শন হিসাবে নামকরন করা হয়েছে।
আলোচ্য বিষয় : মানুষের সফলতা বিফলতা এবং ধ্বংশের পথ কোনটি তাহা পরিষ্কার ভাষায় জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
নাজিলের সময় : সুরাটি মক্কী জীবনে র প্রথম যুগে নাজিল।
ব্যাখ্যা :
والعصرশব্দটির প্রথম অক্ষর و (ওয়াও) শপথের অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। একে কসমিয়া বলা হয়। আল্লাহ তায়ালা কুরআন মজিদের বিভিন্ন স্থানে তারই কোন সৃষ্টির নামে শপথ করেছেন। আল্লাহ তায়ালা কোন জিনিসের গুরুত্ব বুঝানোর জন্য শপথ করেন না। বরং তিনি যে কথা বলতে চান সেই জিনিস তার সত্যতা প্রমান করে বলেই তিনি তাঁর শপথ করেন।
সুতরাং এখানে কালের নামে শপথ করার অর্থ হলো এই সুরায় যে চারটি গুণের কথা বলা হয়েছে যাদের মধ্যে তা থাকবে সে সব লোক ছাড়া বাকি সবই সে মহাক্ষতি ও ধ্বংশের মুখোমুখি - কাল সময় ও স্রোত তার জন্য জলন্ত প্রমাণ। কাল সাইকেলের চাকার মত ঘূর্ণায়মান। এখানে বর্তমান ভবিষ্যত ও অতীত কালকেই বুঝানো হয়েছে।
চলমান সময় ও স্রোতের শপথ করার প্রকৃত তাৎপর্য বুঝানোর জন্য প্রথমতঃ যে বিষয়টি মনে রাখা দরকার তাহলো এই যে, কালের সে অংশটা এখন চলছে তা আসলে দুনিয়ার কাজ করার জন্য প্রতিটি ব্যক্তি এবং প্রতিটি জাতির জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে দেওয়া সময় বা সুযোগ।
উদাহরণ হিসাবে বলা যায় যে, পরীক্ষার হলে পরিক্ষার্থীকে প্রশ্নের দেবার জন্য সময় বেধে দেয়া হয়। যে সেই নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর দেবার জন্য প্রতিটি মুহূর্তকে কাজে লাগায়। ফলে সে ভাল ফলাফলের মাধ্যমে পরীক্ষায় উত্তীর্ন হয়।
অনুরুপ ভাবে আল্লাহ মানুষের হায়াত বা আয়ুষ্কাল নিদিষ্ট করে দিয়েছেন। সেই নির্ধারিত আয়ুষ্কালের মধ্যেই মানুষ যদি পরীক্ষারর্থীর মতো প্রতিটি মুহূর্তকে কল্যানকর এবং সঠিক পথে কাজে লাগায় তাহলে সে সফলতার মাধ্যমে আখেরাতের মহা ক্ষতি থেকে বাঁচতে পারে।
সুতরাং মহাক্ষতি থেকে বাঁচার জন্য সে ভালো কাজ কাজ করতে হবে তা বেঁধে দেওয়া আয়ুষ্কালের মধ্যেই করতে হবে। এতে বোঝা যায় সময়ই হলো আমাদের জীবনের আসল মূলধন।
ইমাম রাযী (র) এ বিষয়ের উদাহরণ হিসাবে একজন মনীষীর উক্তি উল্লেখ করেছেন; তাহলো- “একজন বরফ বিক্রেতার কথা হতেই আমি সুরা আল আসরের অর্থ বুঝতে পেরেছি যে বাজারে জোর গলায় বলছিল- দয়া করো এমন এক ব্যক্তির প্রতি যার পূজি গলে যাচ্ছে। দয়া করে এমন ব্যক্তির প্রতি যার পূজি গলে যাচ্ছে। তার এ কথা শুনে আমি বললাম এইটিই হচ্ছে আসলে والعصر- إن الانسان لفى خسر- বাক্যের অর্থ।
মানুষকে যে আয়ুষ্কাল দেওয়া হয়েছে তা বরফ গলে যাওয়ার মতো দ্রুত অতিবাহিত হয়ে যাচ্ছে। একে যদি নষ্ট করে দেওয়া হয় অথবা ভুল কাজে ব্যয় করা হয় তাহলে সেটিই মানুষের জন্য ক্ষতি। কাজেই চলমান সময়ের কসম খেয়ে এই সুরায় যা বলা হয়েছে তার অর্থ এই যে, এই দ্রুত গতিশীল সময় সাক্ষ্য দিচ্ছে, এই চারটি গুণাবলী শূন্য হয়ে যে মানুষ যে কাজেই নিজের জীবনকাল অতিবাহিত করে- তার সবটুকুই ক্ষতির সওদা ছাড়া কিছুই নয়।
পরীক্ষার হলে যে ছাত্র প্রশ্ন পত্রের উত্তর দেওয়ার পরিবর্তে অন্য কাজে সময় নষ্ট করেছে, তাকে পরীক্ষার হলে টানানো ঘড়ির কাঁটা বলে দিচ্ছে তুমি নিজের ক্ষতি করছো। যে ছাত্র এই সময়ের প্রতিটি মুহূর্ত নিজের প্রশ্ন পত্রের জবাব দেবার কাজে ব্যয় করেছে একমাত্র সেই লাভবান। - إن الانسان لفى خسر “নিশ্চয়ই প্রতিটি মানুষ ক্ষতির মধ্যে রয়েছে”।
এখানে ‘ইনছান’ শব্দটি একবচন হলেও এর অর্থ গোটা মানব জাতিকে বুঝাচ্ছে।
خسر শব্দটি মুনাফা (লাভ) এর বিপরীত শব্দ। خسر শব্দটি দুনিয়া থেকে আখেরাত পর্যন্ত মানুষের প্রকৃত ক্ষতি, ব্যর্থতা ও বঞ্চনাকে বুঝায়। মূলত এখানে যে ক্ষতি বা ধ্বংশের কথা বলা হয়েছে তা দুনিয়ায় ও আখেরাত উভয় জগতের ক্ষতির কথা বলা হয়েছে। আর এই ক্ষতি হচ্ছে বাঁচার জন্য যে চারটি গুণের কথা বলা হয়েছে সেখানে দুনিয়া আখেরাতের বাঁচার কথাই বলা হয়েছে।
দুনিয়া ও আখেরাতে ক্ষতি বা ধ্বংশ থেকে বাঁচার উপায়ঃ
মানুষের চরম ক্ষতি থেকে বাঁচার উপায় হিসাবে আল্লাহ বলেছেন তাহলো,
الا الذين أمنوا وعملوا الصلحت وتواصوا بالحق وتواصوا بالصبر-
(১) ঈমান (২) সৎকাজ (৩) পরস্পরকে সত্য বা হকের উপদেশ দেয় (৪) সবরের উপদেশ দেয়।
এ চারটি কাজের মধ্যে প্রথম দুটি ব্যক্তিকেন্দ্রিক এবং পরবর্তী দুটি সমাজ কেন্দ্রিক। অর্থাৎ প্রথম দুটি আত্মসংশোধন মূলক এবং পরের দুটি সমাজের অন্যান্য মানুষের হেদায়েত এবং সংশোধন মূলক।
ব্যক্তিগত কাজ দুটির প্রথম কাজটি হলো :
الذين أمنوا অর্থ ‘যারা ঈমান আনে’। এর শাব্দিক অর্থ ‘বিশ্বাস’ প্রকৃত অর্থ হলো খোলা মনে নেয়া এবং নিষ্ঠাও দৃঢ়তার সহিত বিশ্বাস করা। অতএব, ঈমানের মাধ্যম হলো তিনটি-
(১) তাশদিক বিল জিনান- অন্তরে দৃঢ় বিশ্বাস।
(২) ইকরার বিল লিসান- মুখে স্বীকৃতি তা বিশ্বাস অনুযায়ী মুখে প্রকাশ।
(৩) আমল বিল আরকান- বাস্তবে কাজে পরিণত।
অর্থাৎ অন্তরের বিশ্বাস অনুযায়ী মুখে প্রকাশ এবং সেই অনুযায়ী কাজের মাধ্যমে বাস্তবায়ন।
ঈমানের বিষয়:
ঈমানের প্রধান ও মূল বিষয় হলো তিনটি।
(১) তাওহীদে বিশ্বাস- অর্থাৎ আল্লাহর একক, তাঁর কোন শরীক নেই, তিনি জীবন-মৃত্যুর মালিক, রিজিক দাতা, আইন দাতা, ও সকল সৃষ্টি জীবের লালন পালন কারী। ভাগ্য নির্ধারণের মালিক তিনি। তাঁর ছাড়া আর কারোর কাছে কিছু চাওয়া যাবে না। সাহায্য তাঁর কাছেই চাইতে হবে।
(২) রিসালাতে বিশ্বাস- নবী-রাসুল কিতাব ও ফেরেশতা এই তিনের সম্বনয়ে হলো রিসালত । অথ্যাৎ জীবরাঈলফেরেশতার মাধ্যম রাসুলদের উপর ওহী বা কিতাব নাজিল হয় ।
(৩) আখেরাতে বিশ্বাস : মানুষের মৃত্যু র পর হতে যে জীবন আরম্ভ হয় যেমন - কবরের জওয়াল জওয়াব ,কবরের আযাব , কিয়ামত ,হাশর মিজান, আমল নামা ,পুলসিরাত , জান্নাত ও জাহান্নাম ইত্যাদির সমন্বয়ে আখেরাত ।
প্রকৃত ঈমান :
পবিত্র কুরআন মজীদেযে ঈমানের কথা বলা হয়েছে তা হলো সন্দেহ সংশয় মুক্ত ঈমান । বিনা প্রশ্নে মেনে নেয়ার এবং তার উপর দৃড়ভাবে টিকে থাকাকে প্রকৃত ঈমান বলেছে আল্লাহ পাক বলেন- إنما المؤمنون الذين أمنوا بالله ورسوله ثم لم يرتابوا অর্থ -সেই সব লোকই প্রকৃত পক্ষে মুমিন যারা আল্লাহ ওতার রাসুলের প্রতি ঈমান আনার পর আর কোন রকম সন্দেহে পড়েনি। (হুজরাত -১৫)
অন্য স্থানে ان الذين قالوا ربنا الله ثم استقاموا - অর্থ : নিশ্চয়ই যারা বলে আল্লাহই আমাদের রব । অত:পর এই কথার উপর দৃঢ় ও অবিচল থাকে । (হামীম - সিজদাহ Ñ৩০)
মুমিনের পরিচয় দিতে গিয়ে আল্লাহ বলেন –
إنما المؤمنون الذي اذا ذكر الله وجلت قلوبهم واذا تليت عليهم أيته زادتهم ايمانا وعلى ربهم يتوكلون- অর্থ :“ প্রকৃত মুমিন তো হল সে সব লোক ,যাদের আল্লাহ তায়ালাকে ¯œরন করানো হলে তাদের হৃদয় কম্পিত হয় এবং যখন তাদের সামনে তার আয়াত সমূহ তেলায়াত করা হয় , তখন তাদের ঈমান বৃদ্ধি পায় এবং তারা সমসময় তাদের মালিকের উপর নির্ভর করে”(আনফাল-২)
উপরোক্ত আয়াত গুলিতে প্রমানিত হলোযে ,ঈমান আনার পর সন্দেহপোষন করা যাবেনা এবং তার উপর দৃঢ়ও অবিচল থাকতে হবে।
মানুষের চরম ক্ষতিথেকে বাঁচার জন্য যে ঈমানের কথা বলা হয়েছে তাহলো এধরনের ঈমান। এধরনের ঈমান যাদের মধ্যে নেই তারা কিছুতেই মহা ক্ষতি থেকে নিস্তার পেতে পারে না ।
দ্বিতীয় কাজ :
وعملوا الصلحتমহাক্ষতি থেকে বাচার দ্বিতীয় উপায় হলো আমলে সালেহা বা ভাল কাজ কংবা কল্যান কর কাজ করা । সব রকমের নেক বা ভালো কাজই হলো আমলে সালেহ ।
যেমন - আল্লাহ এবং বান্দার হক আদায় ,মা বাবার খেদমত করা , বড়দের সন্মান করা ,ছোটদের সেনেহ করা , আত্তীয় ,স্বজন এবং প্রতিবেশীর অধিকার আদায় করা চাষ বাস , ব্যবসা -বানিজ্য ,চাকরী বাকরীরক্ষেত্রে সততার পরিচয়দেয় । প্রতিটি কাজে কর্মে আল্লাহ ও রাসুলের বিধান মত চলা ।
নেক কাজ করা কবুলের জন্য ঈমান শর্ত :
কুরআন মজীদেসেখানেই আমলে সালেহ বানেক কাজের কথা বলা হয়েছেসেখানেই আগে ঈমানের শর্ত জুড়েদেয়া হয়েছে । কাজ টিদেখতে যতই সুন্দর, কল্যান কর এবংনেক মনেহোক নাকেন যদি তার মনে ঈমান সংযুক্ত না থাকে তাহলে আল্লাহর কাছে তা গ্রহন যোগ্য হবেনা কুরআন মজীদে যত সুসংবাদ দেয়া হয়েছে কেবল মাত্র তাদের জন্য যারা ঈমান আনার পরনেক আমল করে । ঈমান ও সৎকাজের সম্পর্ক বীজ ও বৃক্ষের মতো ।
তৃতীয় কাজ : وتواصوا بالحق
উপরোক্ত দুটি গুন হলো ব্যক্তি গত পর্যায় প্রত্যেক ব্যক্তির মধ্যে থাকতে হবে। যারা ঈমান আনে ও সৎকাজ করে তাদের পরস্পরকে হক কথা বলার ও হক কাজ করা এবং ধৈর্য্যরে পথ অবলম্বন করার উপদেশ দিতে হবে।
এর অর্থ হচেছ
প্রথমত: ঈমানদার ও সৎ কর্মশীলদের পৃথক পৃথক ব্যক্তি হিসেবে অবস্থান না করা উচিৎ বরং তাদের সম্পিলনে একটি মুমিনও সৎ সমাজ দেহ গড়ে উঠতে হবে।
দ্বিতীয়ত:
এই সমাজ যাতে বিকৃত না হয়ে যায়সে দায়িত্ব সমাজের প্রত্যেক ব্যক্তিকে উপলদ্ধি করতে হবে। ‘হক’শব্দটি বাতিলের বিপরীত এর শব্দটি দুটি অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে ।
(১) হক অর্থ - সঠিক ,নির্ভুল ,সত্য , ন্যায় ও ইনসাফ ,সুবিচার ।
(২) দ্বিতীয় অর্থ হল -অধিকার /এ অধিকার আল্লাহ হক বান্দার হক বা নিজের হক এর অংশ ।এমন এক গুরুত্ব পূর্ন বিষয় যা যথাযথ ভাবে আদায় করা মানুযের অবশ্যই কর্তব্য ।
হক উপদেশদেবার অর্থ হল ঈমানদার লোকদের সমাজে বাতিল শক্তিকে কখনো মাথা তুলতেদেখে এবং হকের বিপরীতেকোন কাজ হতেদেখে মানুষ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করতে পারবেনা । বরংদেখা মাত্রই প্রতিরোধ করার জন্য দলবদ্ধ ভাবে সক্রিয় ভাবে ভূমিকা পালন করবে।
পক্ষান্তরে যেই সমাজেরলোকেরা এই ভূমিকা পালন করে নাসেই সমাজ ক্ষতি ও ধ্বংস হতে কিছুতেই রক্ষাপেতে পারে না । যারা নিজেদের জায়গায় হকের উপর প্রতিষ্টিত থাকবে কিন্ত নিজেদের সমাজে হককে বিধ্বস্ত হতেদেখে নিবর থাকবে তারাও একদিন এই ক্ষতিতে লিপ্ত হবে ।
এ কথা টি সুরা সায়েদায় বলা হয়েছে - হযরত দাউদ ও হযরত ঈসা ইবনে মারয়ামের মুখ দিয়ে বলা ইসরাঈলদের উপর লানত করা হয়েছে । আর এই লানতের কারন ছিল এই যে , তাদের সমাজেগোনাহ ও জুলুম ব্যপক ভাবে ছড়িয়ে পড়ছিল এবংলোকেরা পরস্পরকে খারাপ কাজে বাধাদেয়াথেকে বিরতথেকেছিল । (৭৮-৭৯,মায়েদা)
আবার এ কথাটি সুরা আরাফে বলা হয়েছে -বনী ইসরাঈলরা যখন প্রকাশ্যে শনিবারের বিধান অমান্য করে মাছ ধরতে শুরু করে তখন তাদের উপর আযাব নাজিল করা হয় এবং সেই আযাবথেকে একমাত্র তাদেরকেই বাচানো হয় যারালোকদেরকে এই গোনাহের কাজে বাধাদেবারচেষ্টা করতো ( ১৬৩-১৬৬ আরাফ)
সুরা আনফালে বিষয়টি এভাবে বলা হয়েছে واتقوا فتنة لاتصيبن الذين ظلموا منكم خاصة- واعلموا ان الله شديد العقاب-অর্থ: রক্ষাপেতেচেস্টা করোসেই বিপদ হতে যার আঘাত বিশেষ করে কেবলসেইলোকদের পর্যন্ত ই সীমবদ্ধ হয়ে থাকবে , এবংতোমাদের মধ্য হতেসে সব লোকসেইগোনাহ করেছে ,অথ্যাৎ সবাইকে আঘাত করবে। (আয়াত -২৫)
এ জন্যই সৎ কাজের আদেশ করা ও অসৎ কাজথেকে বিরত রাখাকে উম্মতে মুসলিমের দায়িত্ব ও কর্তব্য গন্য করা হেেয়ছে ।যেমন- ولتكم منكم امة يدعون الى الخيرويأمرون بالمعروفوبنهون عن المنكر – واولئك هم المفلحون তোমাদের মধ্যথেকে এমন একটি দল থাকা উচিত ,যারা কল্যানের দিকে ডাকবে , ন্যায়ের আদেশ দিবে , আর অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখবে । সত্যি কার অর্থে এরাই হচ্ছে সফল । (আলে ইমরান -১০৪)
উম্মতে মুসলিমাকে সবোত্তম উম্মত বলাহয়েছে যারা এই দায়িত্ব পালন করবে ।যেমন - আল্লাহ বলেছেন كنتم خير امة اخرجت للناس تأمرون بالمعروف وتنهون عن المنكر অর্থ -তোমরা হচ্ছো দুনিয়ার সবোত্তম জাতি সমগ্র মানব জাতির কল্যানের জন্যইতোমাদের আবির্ভাব ,তোমরা মানুষকে সৎ কাজের আদেশ দিবে এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখবে । (্আলে ইমরান-১১০)
এবিষয়টি হাদীছ শরীফে এ ভাবে উল্লেখ করা হয়েছে -নবী করীম (স: ) সমাজে আল্লাহর নির্ধারিত আদেশ নিষেধ এর মধ্যে শিথিলতা প্রদর্শন কারীদের উদাহরন একটি দ্বিতল জাহাজের সাথীদের সাথে তুলনা করা হয়েছে।
এক দললোক দ্বিতল জাহাজে আরোহনের জন্য লটারী করে কারো ভাগ্যে পড়লো জাহাজের নীচের তলা আর কারো ভাগ্যে উপর তলা । নীচের তলারলোকেরা পানির জন্য উপর তলারলোকদের কাছে যাওয়া আসা করতে থাকায় তাদের কষ্টের ও বিরক্তের কারন হয়ে দাড়ালো । তাই নীচ তলায় একজন ক্ষীপ্ত হয়ে একখানা কুড়াল নিয়ে পানির জন্য নৌকার তলা ছিত্র করতে শুরু করল । এদেখে উপর তলারলোকেরা এসে তাকে ধরলো ,তুমি এভাবে ছিত্র করছোকেন . ? সে জবাবে বললো আমাদের জন্য তোমাদের কষ্ট হয় অথচ পানি আমাদের একান্ত প্রয়োজন বিধায় ছিত্র করছি ।
রাসুল(স:) বলেন এখননৌকার সবাই যদি তাকে বাধা নাদেয় তাহলে ঐলোকটাকে বাঁচাতে পারবে এবং নিজেরা ও ডুবে মরা হতে বাচবে। আর যদি তাকে যা ইচ্ছা তাই করতেছেড়েদেয়া হয় তাহলে ঐলোকটাকে ধ্বংস করবে এবং নিজেরা ও ধ্বংস হবে। (বুখারী ২৪৯১নং হাদীছ) ।
কোরআন ও হাদীছ থেকে একথাই বুঝানো হয়েছে সমাজের একশ্রেনীরলোক খারাপ কাজ করলে সবাই মিলে তাকে বাধা দিতে হবে । নচেৎ এ কাজের জন্য সবাই ক্ষতিগ্রস্থ বা ধ্বংস হবে।
চতুর্থ কাজ :
وتواصوا بالصبر সমাজেরলোকদের পরস্পরকে সত্য পথের উপদেশ দেওয়ার সাথে সাথে দ্বিতীয় যে জিনিস টিকে ঈমান দার গনকে ও তাদের সমাজকে ক্ষতি থেকে বাচার জন্য অপরিহার্য শর্ত হিসাবে গন্য করা হয়েছে তাহচেছ এইযে , সমাজের ব্যক্তি বর্গ পরস্পরকে সবর করার উপদেশ দিতে হবে ।
কেননা সমাজেরকোনলোক যখনই সত্য দ্বীন মেনে চলতে চাইবে এবংএ পথের উপর চলা ও টিকে থাকার জন্য অন্যান্যলোকদেরকে নসিহত করবে , বাতিলের উত্থানকে দমনের জন্য সক্রিয় হয়ে উঠবে ,তখনই তাদেরকে বিপদ আপদ ও দ:খ কস্টে পড়তে হবে এবং বাতিলের পক্ষ হতে চরম বাধার সম্পুখীন হবে।
এমতাবস্থায় নিজেকে এপথে টিকে রাখার জন্যধের্য্য ধারন করতে হবে এবং সমাজের অন্যান্যদের ধৈর্য্য ধারনকরার উপদেশ দিতে হবে।এসব কিছুÍ বরদাশত করার জন্য তাদের প্রত্যেক ব্যক্তি অন্যকে সাহস যোগাতে থাকবে।
উপরে বর্নিত ব্যক্তিগত দুটি এবং সামষ্টিক ভাবে দুুটিমোট চারটি গুন যদি কারো মধ্যে না থাকে তবে নিশ্চিত ভাবে দুনিয়া ও আখেরাতের চরম ক্ষতি বা ধ্বংসের মধ্যে নিপতিত হবে। হওয়া । পরকালে ক্ষতি মানেই হলো জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হওয়া।
ধ্বংস ও ক্ষতিগ্রস্থতা থেকে বাচতে হলে -
- সময়ের গুরুত্ব দিতে হবে।
- তাওহীদ ,রেসালাত ও আখেরাতের প্রতি ঈমান রাখতে হবে ।
- ঈমানের তাকিদে আল্লাহও রাসুলের দিক নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করতে হবে ।
- আকিদা ,বিশ্বাস , দুনিয়ার কাজে যা সত্য সঠিক তাই গ্রহন করতে হবে।
- আল্লাহ ও তার বান্দার অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
- বাধা বিপত্তি উপেক্ষা করে সত্যের পথে টিকে থাকতে হবে ।
- দুনিয়ায় সামাজিক ক্ষতি ও আখেরাতের স্থায়ী ক্ষতি জাহান্নাম থেকে বাচার জন্য নিচের ব্যক্তি গত দুটি এবং সামগ্রিক দুটি কাজ করতে হবে।
- ব্যক্তি গত কাজ দুটি হলো -
- নিষ্ঠাবান পূর্ন ঈমান দার হতেহবে।
- প্রতি মুহুতের্ নেক ও সৎ আমলের মাধ্যমে আল্লাহকে পাওয়ারচেস্টা করতে হবে।
- সামাজিক দুটি গুন হলো -
- ১ । পরস্পরকে হক বা সত্য কাজ করার উপদেশ দিতে হবে।
- ২। হক কাজ করতে যত দু:খ কস্ট ও বাধা বিপত্তি আসুক না কেন তার উপর টিকে থাকার জন্যধের্য্য অবলম্বন করতে হবে।
১। কালের শপথ :
২। নিশ্চয়ই সকল মানুষ ক্ষতির মধ্যে রয়েছে।
৩। কিন্ত তারা বাদে, যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে এবং পরস্পরকে হকের নির্দেশ দেয় এবং একে অপরকে ধৈর্য ধরার নির্দেশ দেয়।
পরিচয় : সুরা আল আসর আয়াত-৩ রুকু-১ সুরাটির প্রথম শব্দ العصر কে নিদর্শন হিসাবে নামকরন করা হয়েছে।
আলোচ্য বিষয় : মানুষের সফলতা বিফলতা এবং ধ্বংশের পথ কোনটি তাহা পরিষ্কার ভাষায় জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
নাজিলের সময় : সুরাটি মক্কী জীবনে র প্রথম যুগে নাজিল।
ব্যাখ্যা :
والعصرশব্দটির প্রথম অক্ষর و (ওয়াও) শপথের অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। একে কসমিয়া বলা হয়। আল্লাহ তায়ালা কুরআন মজিদের বিভিন্ন স্থানে তারই কোন সৃষ্টির নামে শপথ করেছেন। আল্লাহ তায়ালা কোন জিনিসের গুরুত্ব বুঝানোর জন্য শপথ করেন না। বরং তিনি যে কথা বলতে চান সেই জিনিস তার সত্যতা প্রমান করে বলেই তিনি তাঁর শপথ করেন।
সুতরাং এখানে কালের নামে শপথ করার অর্থ হলো এই সুরায় যে চারটি গুণের কথা বলা হয়েছে যাদের মধ্যে তা থাকবে সে সব লোক ছাড়া বাকি সবই সে মহাক্ষতি ও ধ্বংশের মুখোমুখি - কাল সময় ও স্রোত তার জন্য জলন্ত প্রমাণ। কাল সাইকেলের চাকার মত ঘূর্ণায়মান। এখানে বর্তমান ভবিষ্যত ও অতীত কালকেই বুঝানো হয়েছে।
চলমান সময় ও স্রোতের শপথ করার প্রকৃত তাৎপর্য বুঝানোর জন্য প্রথমতঃ যে বিষয়টি মনে রাখা দরকার তাহলো এই যে, কালের সে অংশটা এখন চলছে তা আসলে দুনিয়ার কাজ করার জন্য প্রতিটি ব্যক্তি এবং প্রতিটি জাতির জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে দেওয়া সময় বা সুযোগ।
উদাহরণ হিসাবে বলা যায় যে, পরীক্ষার হলে পরিক্ষার্থীকে প্রশ্নের দেবার জন্য সময় বেধে দেয়া হয়। যে সেই নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর দেবার জন্য প্রতিটি মুহূর্তকে কাজে লাগায়। ফলে সে ভাল ফলাফলের মাধ্যমে পরীক্ষায় উত্তীর্ন হয়।
অনুরুপ ভাবে আল্লাহ মানুষের হায়াত বা আয়ুষ্কাল নিদিষ্ট করে দিয়েছেন। সেই নির্ধারিত আয়ুষ্কালের মধ্যেই মানুষ যদি পরীক্ষারর্থীর মতো প্রতিটি মুহূর্তকে কল্যানকর এবং সঠিক পথে কাজে লাগায় তাহলে সে সফলতার মাধ্যমে আখেরাতের মহা ক্ষতি থেকে বাঁচতে পারে।
সুতরাং মহাক্ষতি থেকে বাঁচার জন্য সে ভালো কাজ কাজ করতে হবে তা বেঁধে দেওয়া আয়ুষ্কালের মধ্যেই করতে হবে। এতে বোঝা যায় সময়ই হলো আমাদের জীবনের আসল মূলধন।
ইমাম রাযী (র) এ বিষয়ের উদাহরণ হিসাবে একজন মনীষীর উক্তি উল্লেখ করেছেন; তাহলো- “একজন বরফ বিক্রেতার কথা হতেই আমি সুরা আল আসরের অর্থ বুঝতে পেরেছি যে বাজারে জোর গলায় বলছিল- দয়া করো এমন এক ব্যক্তির প্রতি যার পূজি গলে যাচ্ছে। দয়া করে এমন ব্যক্তির প্রতি যার পূজি গলে যাচ্ছে। তার এ কথা শুনে আমি বললাম এইটিই হচ্ছে আসলে والعصر- إن الانسان لفى خسر- বাক্যের অর্থ।
মানুষকে যে আয়ুষ্কাল দেওয়া হয়েছে তা বরফ গলে যাওয়ার মতো দ্রুত অতিবাহিত হয়ে যাচ্ছে। একে যদি নষ্ট করে দেওয়া হয় অথবা ভুল কাজে ব্যয় করা হয় তাহলে সেটিই মানুষের জন্য ক্ষতি। কাজেই চলমান সময়ের কসম খেয়ে এই সুরায় যা বলা হয়েছে তার অর্থ এই যে, এই দ্রুত গতিশীল সময় সাক্ষ্য দিচ্ছে, এই চারটি গুণাবলী শূন্য হয়ে যে মানুষ যে কাজেই নিজের জীবনকাল অতিবাহিত করে- তার সবটুকুই ক্ষতির সওদা ছাড়া কিছুই নয়।
পরীক্ষার হলে যে ছাত্র প্রশ্ন পত্রের উত্তর দেওয়ার পরিবর্তে অন্য কাজে সময় নষ্ট করেছে, তাকে পরীক্ষার হলে টানানো ঘড়ির কাঁটা বলে দিচ্ছে তুমি নিজের ক্ষতি করছো। যে ছাত্র এই সময়ের প্রতিটি মুহূর্ত নিজের প্রশ্ন পত্রের জবাব দেবার কাজে ব্যয় করেছে একমাত্র সেই লাভবান। - إن الانسان لفى خسر “নিশ্চয়ই প্রতিটি মানুষ ক্ষতির মধ্যে রয়েছে”।
এখানে ‘ইনছান’ শব্দটি একবচন হলেও এর অর্থ গোটা মানব জাতিকে বুঝাচ্ছে।
خسر শব্দটি মুনাফা (লাভ) এর বিপরীত শব্দ। خسر শব্দটি দুনিয়া থেকে আখেরাত পর্যন্ত মানুষের প্রকৃত ক্ষতি, ব্যর্থতা ও বঞ্চনাকে বুঝায়। মূলত এখানে যে ক্ষতি বা ধ্বংশের কথা বলা হয়েছে তা দুনিয়ায় ও আখেরাত উভয় জগতের ক্ষতির কথা বলা হয়েছে। আর এই ক্ষতি হচ্ছে বাঁচার জন্য যে চারটি গুণের কথা বলা হয়েছে সেখানে দুনিয়া আখেরাতের বাঁচার কথাই বলা হয়েছে।
দুনিয়া ও আখেরাতে ক্ষতি বা ধ্বংশ থেকে বাঁচার উপায়ঃ
মানুষের চরম ক্ষতি থেকে বাঁচার উপায় হিসাবে আল্লাহ বলেছেন তাহলো,
الا الذين أمنوا وعملوا الصلحت وتواصوا بالحق وتواصوا بالصبر-
(১) ঈমান (২) সৎকাজ (৩) পরস্পরকে সত্য বা হকের উপদেশ দেয় (৪) সবরের উপদেশ দেয়।
এ চারটি কাজের মধ্যে প্রথম দুটি ব্যক্তিকেন্দ্রিক এবং পরবর্তী দুটি সমাজ কেন্দ্রিক। অর্থাৎ প্রথম দুটি আত্মসংশোধন মূলক এবং পরের দুটি সমাজের অন্যান্য মানুষের হেদায়েত এবং সংশোধন মূলক।
ব্যক্তিগত কাজ দুটির প্রথম কাজটি হলো :
الذين أمنوا অর্থ ‘যারা ঈমান আনে’। এর শাব্দিক অর্থ ‘বিশ্বাস’ প্রকৃত অর্থ হলো খোলা মনে নেয়া এবং নিষ্ঠাও দৃঢ়তার সহিত বিশ্বাস করা। অতএব, ঈমানের মাধ্যম হলো তিনটি-
(১) তাশদিক বিল জিনান- অন্তরে দৃঢ় বিশ্বাস।
(২) ইকরার বিল লিসান- মুখে স্বীকৃতি তা বিশ্বাস অনুযায়ী মুখে প্রকাশ।
(৩) আমল বিল আরকান- বাস্তবে কাজে পরিণত।
অর্থাৎ অন্তরের বিশ্বাস অনুযায়ী মুখে প্রকাশ এবং সেই অনুযায়ী কাজের মাধ্যমে বাস্তবায়ন।
ঈমানের বিষয়:
ঈমানের প্রধান ও মূল বিষয় হলো তিনটি।
(১) তাওহীদে বিশ্বাস- অর্থাৎ আল্লাহর একক, তাঁর কোন শরীক নেই, তিনি জীবন-মৃত্যুর মালিক, রিজিক দাতা, আইন দাতা, ও সকল সৃষ্টি জীবের লালন পালন কারী। ভাগ্য নির্ধারণের মালিক তিনি। তাঁর ছাড়া আর কারোর কাছে কিছু চাওয়া যাবে না। সাহায্য তাঁর কাছেই চাইতে হবে।
(২) রিসালাতে বিশ্বাস- নবী-রাসুল কিতাব ও ফেরেশতা এই তিনের সম্বনয়ে হলো রিসালত । অথ্যাৎ জীবরাঈলফেরেশতার মাধ্যম রাসুলদের উপর ওহী বা কিতাব নাজিল হয় ।
(৩) আখেরাতে বিশ্বাস : মানুষের মৃত্যু র পর হতে যে জীবন আরম্ভ হয় যেমন - কবরের জওয়াল জওয়াব ,কবরের আযাব , কিয়ামত ,হাশর মিজান, আমল নামা ,পুলসিরাত , জান্নাত ও জাহান্নাম ইত্যাদির সমন্বয়ে আখেরাত ।
প্রকৃত ঈমান :
পবিত্র কুরআন মজীদেযে ঈমানের কথা বলা হয়েছে তা হলো সন্দেহ সংশয় মুক্ত ঈমান । বিনা প্রশ্নে মেনে নেয়ার এবং তার উপর দৃড়ভাবে টিকে থাকাকে প্রকৃত ঈমান বলেছে আল্লাহ পাক বলেন- إنما المؤمنون الذين أمنوا بالله ورسوله ثم لم يرتابوا অর্থ -সেই সব লোকই প্রকৃত পক্ষে মুমিন যারা আল্লাহ ওতার রাসুলের প্রতি ঈমান আনার পর আর কোন রকম সন্দেহে পড়েনি। (হুজরাত -১৫)
অন্য স্থানে ان الذين قالوا ربنا الله ثم استقاموا - অর্থ : নিশ্চয়ই যারা বলে আল্লাহই আমাদের রব । অত:পর এই কথার উপর দৃঢ় ও অবিচল থাকে । (হামীম - সিজদাহ Ñ৩০)
মুমিনের পরিচয় দিতে গিয়ে আল্লাহ বলেন –
إنما المؤمنون الذي اذا ذكر الله وجلت قلوبهم واذا تليت عليهم أيته زادتهم ايمانا وعلى ربهم يتوكلون- অর্থ :“ প্রকৃত মুমিন তো হল সে সব লোক ,যাদের আল্লাহ তায়ালাকে ¯œরন করানো হলে তাদের হৃদয় কম্পিত হয় এবং যখন তাদের সামনে তার আয়াত সমূহ তেলায়াত করা হয় , তখন তাদের ঈমান বৃদ্ধি পায় এবং তারা সমসময় তাদের মালিকের উপর নির্ভর করে”(আনফাল-২)
উপরোক্ত আয়াত গুলিতে প্রমানিত হলোযে ,ঈমান আনার পর সন্দেহপোষন করা যাবেনা এবং তার উপর দৃঢ়ও অবিচল থাকতে হবে।
মানুষের চরম ক্ষতিথেকে বাঁচার জন্য যে ঈমানের কথা বলা হয়েছে তাহলো এধরনের ঈমান। এধরনের ঈমান যাদের মধ্যে নেই তারা কিছুতেই মহা ক্ষতি থেকে নিস্তার পেতে পারে না ।
দ্বিতীয় কাজ :
وعملوا الصلحتমহাক্ষতি থেকে বাচার দ্বিতীয় উপায় হলো আমলে সালেহা বা ভাল কাজ কংবা কল্যান কর কাজ করা । সব রকমের নেক বা ভালো কাজই হলো আমলে সালেহ ।
যেমন - আল্লাহ এবং বান্দার হক আদায় ,মা বাবার খেদমত করা , বড়দের সন্মান করা ,ছোটদের সেনেহ করা , আত্তীয় ,স্বজন এবং প্রতিবেশীর অধিকার আদায় করা চাষ বাস , ব্যবসা -বানিজ্য ,চাকরী বাকরীরক্ষেত্রে সততার পরিচয়দেয় । প্রতিটি কাজে কর্মে আল্লাহ ও রাসুলের বিধান মত চলা ।
নেক কাজ করা কবুলের জন্য ঈমান শর্ত :
কুরআন মজীদেসেখানেই আমলে সালেহ বানেক কাজের কথা বলা হয়েছেসেখানেই আগে ঈমানের শর্ত জুড়েদেয়া হয়েছে । কাজ টিদেখতে যতই সুন্দর, কল্যান কর এবংনেক মনেহোক নাকেন যদি তার মনে ঈমান সংযুক্ত না থাকে তাহলে আল্লাহর কাছে তা গ্রহন যোগ্য হবেনা কুরআন মজীদে যত সুসংবাদ দেয়া হয়েছে কেবল মাত্র তাদের জন্য যারা ঈমান আনার পরনেক আমল করে । ঈমান ও সৎকাজের সম্পর্ক বীজ ও বৃক্ষের মতো ।
তৃতীয় কাজ : وتواصوا بالحق
উপরোক্ত দুটি গুন হলো ব্যক্তি গত পর্যায় প্রত্যেক ব্যক্তির মধ্যে থাকতে হবে। যারা ঈমান আনে ও সৎকাজ করে তাদের পরস্পরকে হক কথা বলার ও হক কাজ করা এবং ধৈর্য্যরে পথ অবলম্বন করার উপদেশ দিতে হবে।
এর অর্থ হচেছ
প্রথমত: ঈমানদার ও সৎ কর্মশীলদের পৃথক পৃথক ব্যক্তি হিসেবে অবস্থান না করা উচিৎ বরং তাদের সম্পিলনে একটি মুমিনও সৎ সমাজ দেহ গড়ে উঠতে হবে।
দ্বিতীয়ত:
এই সমাজ যাতে বিকৃত না হয়ে যায়সে দায়িত্ব সমাজের প্রত্যেক ব্যক্তিকে উপলদ্ধি করতে হবে। ‘হক’শব্দটি বাতিলের বিপরীত এর শব্দটি দুটি অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে ।
(১) হক অর্থ - সঠিক ,নির্ভুল ,সত্য , ন্যায় ও ইনসাফ ,সুবিচার ।
(২) দ্বিতীয় অর্থ হল -অধিকার /এ অধিকার আল্লাহ হক বান্দার হক বা নিজের হক এর অংশ ।এমন এক গুরুত্ব পূর্ন বিষয় যা যথাযথ ভাবে আদায় করা মানুযের অবশ্যই কর্তব্য ।
হক উপদেশদেবার অর্থ হল ঈমানদার লোকদের সমাজে বাতিল শক্তিকে কখনো মাথা তুলতেদেখে এবং হকের বিপরীতেকোন কাজ হতেদেখে মানুষ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করতে পারবেনা । বরংদেখা মাত্রই প্রতিরোধ করার জন্য দলবদ্ধ ভাবে সক্রিয় ভাবে ভূমিকা পালন করবে।
পক্ষান্তরে যেই সমাজেরলোকেরা এই ভূমিকা পালন করে নাসেই সমাজ ক্ষতি ও ধ্বংস হতে কিছুতেই রক্ষাপেতে পারে না । যারা নিজেদের জায়গায় হকের উপর প্রতিষ্টিত থাকবে কিন্ত নিজেদের সমাজে হককে বিধ্বস্ত হতেদেখে নিবর থাকবে তারাও একদিন এই ক্ষতিতে লিপ্ত হবে ।
এ কথা টি সুরা সায়েদায় বলা হয়েছে - হযরত দাউদ ও হযরত ঈসা ইবনে মারয়ামের মুখ দিয়ে বলা ইসরাঈলদের উপর লানত করা হয়েছে । আর এই লানতের কারন ছিল এই যে , তাদের সমাজেগোনাহ ও জুলুম ব্যপক ভাবে ছড়িয়ে পড়ছিল এবংলোকেরা পরস্পরকে খারাপ কাজে বাধাদেয়াথেকে বিরতথেকেছিল । (৭৮-৭৯,মায়েদা)
আবার এ কথাটি সুরা আরাফে বলা হয়েছে -বনী ইসরাঈলরা যখন প্রকাশ্যে শনিবারের বিধান অমান্য করে মাছ ধরতে শুরু করে তখন তাদের উপর আযাব নাজিল করা হয় এবং সেই আযাবথেকে একমাত্র তাদেরকেই বাচানো হয় যারালোকদেরকে এই গোনাহের কাজে বাধাদেবারচেষ্টা করতো ( ১৬৩-১৬৬ আরাফ)
সুরা আনফালে বিষয়টি এভাবে বলা হয়েছে واتقوا فتنة لاتصيبن الذين ظلموا منكم خاصة- واعلموا ان الله شديد العقاب-অর্থ: রক্ষাপেতেচেস্টা করোসেই বিপদ হতে যার আঘাত বিশেষ করে কেবলসেইলোকদের পর্যন্ত ই সীমবদ্ধ হয়ে থাকবে , এবংতোমাদের মধ্য হতেসে সব লোকসেইগোনাহ করেছে ,অথ্যাৎ সবাইকে আঘাত করবে। (আয়াত -২৫)
এ জন্যই সৎ কাজের আদেশ করা ও অসৎ কাজথেকে বিরত রাখাকে উম্মতে মুসলিমের দায়িত্ব ও কর্তব্য গন্য করা হেেয়ছে ।যেমন- ولتكم منكم امة يدعون الى الخيرويأمرون بالمعروفوبنهون عن المنكر – واولئك هم المفلحون তোমাদের মধ্যথেকে এমন একটি দল থাকা উচিত ,যারা কল্যানের দিকে ডাকবে , ন্যায়ের আদেশ দিবে , আর অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখবে । সত্যি কার অর্থে এরাই হচ্ছে সফল । (আলে ইমরান -১০৪)
উম্মতে মুসলিমাকে সবোত্তম উম্মত বলাহয়েছে যারা এই দায়িত্ব পালন করবে ।যেমন - আল্লাহ বলেছেন كنتم خير امة اخرجت للناس تأمرون بالمعروف وتنهون عن المنكر অর্থ -তোমরা হচ্ছো দুনিয়ার সবোত্তম জাতি সমগ্র মানব জাতির কল্যানের জন্যইতোমাদের আবির্ভাব ,তোমরা মানুষকে সৎ কাজের আদেশ দিবে এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখবে । (্আলে ইমরান-১১০)
এবিষয়টি হাদীছ শরীফে এ ভাবে উল্লেখ করা হয়েছে -নবী করীম (স: ) সমাজে আল্লাহর নির্ধারিত আদেশ নিষেধ এর মধ্যে শিথিলতা প্রদর্শন কারীদের উদাহরন একটি দ্বিতল জাহাজের সাথীদের সাথে তুলনা করা হয়েছে।
এক দললোক দ্বিতল জাহাজে আরোহনের জন্য লটারী করে কারো ভাগ্যে পড়লো জাহাজের নীচের তলা আর কারো ভাগ্যে উপর তলা । নীচের তলারলোকেরা পানির জন্য উপর তলারলোকদের কাছে যাওয়া আসা করতে থাকায় তাদের কষ্টের ও বিরক্তের কারন হয়ে দাড়ালো । তাই নীচ তলায় একজন ক্ষীপ্ত হয়ে একখানা কুড়াল নিয়ে পানির জন্য নৌকার তলা ছিত্র করতে শুরু করল । এদেখে উপর তলারলোকেরা এসে তাকে ধরলো ,তুমি এভাবে ছিত্র করছোকেন . ? সে জবাবে বললো আমাদের জন্য তোমাদের কষ্ট হয় অথচ পানি আমাদের একান্ত প্রয়োজন বিধায় ছিত্র করছি ।
রাসুল(স:) বলেন এখননৌকার সবাই যদি তাকে বাধা নাদেয় তাহলে ঐলোকটাকে বাঁচাতে পারবে এবং নিজেরা ও ডুবে মরা হতে বাচবে। আর যদি তাকে যা ইচ্ছা তাই করতেছেড়েদেয়া হয় তাহলে ঐলোকটাকে ধ্বংস করবে এবং নিজেরা ও ধ্বংস হবে। (বুখারী ২৪৯১নং হাদীছ) ।
কোরআন ও হাদীছ থেকে একথাই বুঝানো হয়েছে সমাজের একশ্রেনীরলোক খারাপ কাজ করলে সবাই মিলে তাকে বাধা দিতে হবে । নচেৎ এ কাজের জন্য সবাই ক্ষতিগ্রস্থ বা ধ্বংস হবে।
চতুর্থ কাজ :
وتواصوا بالصبر সমাজেরলোকদের পরস্পরকে সত্য পথের উপদেশ দেওয়ার সাথে সাথে দ্বিতীয় যে জিনিস টিকে ঈমান দার গনকে ও তাদের সমাজকে ক্ষতি থেকে বাচার জন্য অপরিহার্য শর্ত হিসাবে গন্য করা হয়েছে তাহচেছ এইযে , সমাজের ব্যক্তি বর্গ পরস্পরকে সবর করার উপদেশ দিতে হবে ।
কেননা সমাজেরকোনলোক যখনই সত্য দ্বীন মেনে চলতে চাইবে এবংএ পথের উপর চলা ও টিকে থাকার জন্য অন্যান্যলোকদেরকে নসিহত করবে , বাতিলের উত্থানকে দমনের জন্য সক্রিয় হয়ে উঠবে ,তখনই তাদেরকে বিপদ আপদ ও দ:খ কস্টে পড়তে হবে এবং বাতিলের পক্ষ হতে চরম বাধার সম্পুখীন হবে।
এমতাবস্থায় নিজেকে এপথে টিকে রাখার জন্যধের্য্য ধারন করতে হবে এবং সমাজের অন্যান্যদের ধৈর্য্য ধারনকরার উপদেশ দিতে হবে।এসব কিছুÍ বরদাশত করার জন্য তাদের প্রত্যেক ব্যক্তি অন্যকে সাহস যোগাতে থাকবে।
উপরে বর্নিত ব্যক্তিগত দুটি এবং সামষ্টিক ভাবে দুুটিমোট চারটি গুন যদি কারো মধ্যে না থাকে তবে নিশ্চিত ভাবে দুনিয়া ও আখেরাতের চরম ক্ষতি বা ধ্বংসের মধ্যে নিপতিত হবে। হওয়া । পরকালে ক্ষতি মানেই হলো জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হওয়া।
ধ্বংস ও ক্ষতিগ্রস্থতা থেকে বাচতে হলে -
- সময়ের গুরুত্ব দিতে হবে।
- তাওহীদ ,রেসালাত ও আখেরাতের প্রতি ঈমান রাখতে হবে ।
- ঈমানের তাকিদে আল্লাহও রাসুলের দিক নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করতে হবে ।
- আকিদা ,বিশ্বাস , দুনিয়ার কাজে যা সত্য সঠিক তাই গ্রহন করতে হবে।
- আল্লাহ ও তার বান্দার অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
- বাধা বিপত্তি উপেক্ষা করে সত্যের পথে টিকে থাকতে হবে ।
- দুনিয়ায় সামাজিক ক্ষতি ও আখেরাতের স্থায়ী ক্ষতি জাহান্নাম থেকে বাচার জন্য নিচের ব্যক্তি গত দুটি এবং সামগ্রিক দুটি কাজ করতে হবে।
- ব্যক্তি গত কাজ দুটি হলো -
- নিষ্ঠাবান পূর্ন ঈমান দার হতেহবে।
- প্রতি মুহুতের্ নেক ও সৎ আমলের মাধ্যমে আল্লাহকে পাওয়ারচেস্টা করতে হবে।
- সামাজিক দুটি গুন হলো -
- ১ । পরস্পরকে হক বা সত্য কাজ করার উপদেশ দিতে হবে।
- ২। হক কাজ করতে যত দু:খ কস্ট ও বাধা বিপত্তি আসুক না কেন তার উপর টিকে থাকার জন্যধের্য্য অবলম্বন করতে হবে।
সুন্দরভাবে উপস্তাপনা ভাল লেগেছে। আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিন।
উত্তরমুছুনধন্যবাদ
উত্তরমুছুনমাশাল্লাহঅনেক কিছু শিকলাম
উত্তরমুছুনঅনেক ভালো উপস্থাপন
উত্তরমুছুনযাযাকাল্লাহ খাইরান
উত্তরমুছুনমাশাআল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ। অনেক তথ্যবহুল
উত্তরমুছুনঅসাধারণ ,জাযাকাল্লাহু খায়রান কাসিরা,আল্লাহ আপনাকে আরো অনেক অনেক সুন্দর দারস উপস্থাপন করার তাওফিক দান করুন। আমীন
উত্তরমুছুনধন্যবাদ..... আমাদের এত সুন্দর কিছু শেখার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য
উত্তরমুছুনমাশা-আল্লাহ
উত্তরমুছুন