রবিবার, ১০ মে, ২০১৫

পাওয়ার-অব-এটর্নি কি ?



পাওয়ার-অব-এটর্ণি বলতে এমন এক দলিল কে বোঝায় যার মাধ্যমে কোন ব্যক্তি তার পক্ষে উক্ত দলিলে বর্নিত কার্য-সম্পাদনের জন্য আইনানুগভাবে অন্য কোন ব্যক্তির নিকট ক্ষমতা প্রদান করেনসুতরাং,পাওয়ার-অব-এটর্নি'র অধীনে ক্ষমতা প্রাপ্ত ব্যক্তি মূল মালিকের ন্যায় প্রায় এক-ই ক্ষমতা উপভোগ করে থাকে

পাওয়ার-অব-এটর্নি প্রধাণত দুই প্রকা্রঃ

প্রত্যাহারযোগ্য পাওয়ার-অব-এটর্নি; এবং
অ-প্রত্যাহারযোগ্য পাওয়ার-অব-এটর্ণি

অ-প্রত্যাহারযোগ্য পাওয়ার-অব-এটর্ণিঃ

স্থাবর সম্পতি বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে, বিক্রয় চুক্তি সম্পাদনের বা loan নেওয়ার বিপরীতে স্থাবর সম্পত্তি বন্ধক প্রদানের জন্য প্রদত্ত পাওয়ার-অব-এটর্ণিকে উদ্দেশ্যে অ-প্রত্যাহারযোগ্য পাওয়ার-অব-এটর্ণি বলেএরুপ পাওয়ার আব এটর্ণি-তে পাওয়ার গ্রহীতার মূল মালিকের ন্যায় প্রায় এক ই ক্ষমতা থাকে অ-প্রত্যাহারযোগ্য পাওয়ার-অব-এটর্ণি'র ক্ষেত্রে পাওয়ার গ্রহীতার মৃত্যু হলে বা আইনগতভাবে দলিল সম্পাদনে অক্ষম হলে উক্ত মৃত বা অক্ষম পাওয়ার গ্রহীতার বৈধ ওয়ারিশ বা স্থলবর্তীর উপর দলিল থেকে সৃস্ট দায় বা অধিকার স্বয়ংক্রিয়ভাবে অর্পিত হবে

 

পাওয়ার অব অটর্ণী বা আমমোক্তার নিয়োগ-পদ্ধতি


যাঁরা সম্পত্তি ভোগ দখল করেন, রণাবেণ করেন, সম্পত্তি কেনা-বেঁচা করে থাকেন তাঁদের জানা উচিৎ পাওয়ার অব অ্যাটর্ণী বা আমমোক্তার নিয়োগ-পদ্ধতি সম্পর্কে ধরুন, আপনি অঢেল সম্পত্তির মালিকবয়সের ভারে নুয়ে পড়েছেনছেলেমেয়েরাও চাকুরী কিংবা বিবাহ সূত্রে আপনার কাছ থেকে দূরে থাকেনআগের মতো জমিজমা দেখাশোনা করতে পারছেন নাজায়গাজমি যা আছে আপনার মৃত্যুর পরে তো ছেলেমেয়েদেরই হবেকিন্তু তারা এখন কাছে নেইতাই আপনি ঠিক করলেন বিশ্বস্থ কাউকে জায়গাজমি দেখাশোনার দায়িত্ব দেবেনকিন্তু কীভাবে দায়িত্ব দিতে হবে? আপনাকে এখন যা করতে হবে তা হচ্ছে ওই বিশ্বস্থ ব্যাক্তির উপর পাওয়ার অব অ্যার্টনি বা আমমোক্তারনামা করতে হবেতা হতে হবে লিখিতএটি একটি আইনগত দলিলস্ট্যাম্প আইন অনুযায়ী যে দলিল দিয়ে কোনো ব্যক্তিকে অপর কোনো ব্যক্তির পে হাজির হয়ে মতা প্রদান করা তাকে আমমোক্তারনামা দলিল বলেযাকে মোক্তার নিয়োগ করা হলো তিনি মূল মালিকের পে সম্পত্তির দান, বিক্রি, হস্তান্তর, রণাবেণ, বন্ধক রাখা, খাজনা প্রদান করে থাকেনআমমোক্তারনামা দলিলে স্পষ্ট করে লেখা থাকতে হবে যাকে পাওয়ার বা মতা দেওয়া হলো তিনি কী কী করতে পারবেন, কিংবা পারবেন নাসাধারণত মোক্তারনামা দুই প্রকারএকটি হচ্ছে সাধারণ মোক্তারনামা, যাকে আমমোক্তারনামা বলা হয়আরেকটি হচ্ছে খাস মোক্তারনামা, যাকে বিশেষ মোক্তারনামা বলা হয়
সাধারণত মোক্তারনামায় মোক্তারদাতার পে ব্যাপক মতা দেওয়া হয় কিন্তু বিশেষ মোক্তারনামা সম্পাদন করতে হয় নির্দিষ্ট কাজের জন্যসাধারণত আমমোক্তারনামা যেগুলো জমিজমা হস্তান্তরের সঙ্গে জড়িত নয়, সেগুলো নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে নোটারি করে নিলে হয়কিন্তু জমিজমা হস্তান্তরসংক্রান্ত মোক্তারনামা অবশ্যই রেজিস্ট্রি করাতে হবে, নইলে এর আইনগত ভিত্তি থাকে নারেজিস্ট্রেশন দলিল সম্পাদনের তিন মাসের মধ্যে করতে হবেকোনো মামলা-মোকাদ্দমা পরিচালনার েেত্রও আমমোক্তারনামা নিয়োগ করা যায়এ েেত্র আদালতের অনুমতি লাগবে২০১১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর পাওয়ার অব অ্যাটর্নি বা আমমোক্তারনামার েেত্র নতুন নিয়ম করা হয়েছেযে কোনো দলিল হস্তান্তর, ক্রয়, বিক্রয়, উন্নয়ন এবং ঋণগ্রহণের েেত্র দাতা ও গ্রহীতা উভয়ের ছবি দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে
তবে বিদেশে বসবাস বা অবস্থানরত কোনো ব্যক্তি কাউকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি বা আমমোক্তারনামা দিতে চাইলে বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে দলিল সম্পন্ন করে এবং প্রত্যয়ন করে পাঠাতে হবে এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তা সত্যায়িত করাতে হবে
কিন্তু অনেক সময় দেখা যায় মোক্তার নিজের নামে কিংবা প্রতারণামূলকভাবে জায়গাজমি হস্তান্তর বা বিক্রি করেছেনএ নিয়ে মামলা-মোকাদ্দমাও কম হয় না তাই দলিলে শর্তগুলো স্পষ্ট করে লেখা থাকতে হবে
যেকোনো সময় মোক্তারনামা বাতিল করা যায়যে রেজিস্ট্রি অফিসে রেজিস্ট্রি করা হয়েছিল সে জেলায় রেজিস্ট্রারের বরাবর মোক্তারনামা বাতিলের জন্য আবেদন করতে হবেরেজিস্ট্রার এটি রদ করবেন নির্ধারিত পদ্ধতিতে এবং তার জেলার রেজিস্ট্রি অফিসে নোটিশের মাধ্যমে জানিয়ে দেবেনযদি রেজিস্ট্রি করা না হয়ে থাকে তাহলে আমমোক্তার বাতিল ঘোষণা করে নির্ধারিত স্ট্যাম্পে দলিল সম্পন্ন করা যেতে পারে

সোমবার, ৪ মে, ২০১৫

নারী অধিকার সংক্রান্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ আইন



নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ সংশোধীত, ২০০৩ (২০০০ সনের ৮ নং আইন)
যৌতুক নিরোধ আইন, ১৯৮০ (১৯৮০ সনের ৩৫ নং আইন)
বাল্য বিবাহ নিরোধ আইন, ১৯২৯ (১৯২৯ সনের ১৯নং আইন)
এসিড নিয়ন্ত্রণ আইন ২০০২ (২০০২ সনের আইন ১নং আইন)
এসিড অপরাধ দমন আইন, ২০০২
মুসলিম বিবাহ ও তালাক (রেজিস্ট্রীকরণ) আইন, ১৯৭৪ (১৯৭৪ সনের ৫২নং আইন)
মুসলিম বিবাহ ও তালাক (রেজিস্ট্রীকরণ) আইন, ১৯৭৫
মুসলিম বিবাহ বিচ্ছেদ আইন, ১৯৩৯ 
মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ, ১৯৬১
তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯
পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন, ২০১০
বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬
পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ, ১৯৮৫

রবিবার, ৩ মে, ২০১৫

জেনে রাখুন, দলিলের বিভিন্ন রকম শব্দের অর্থ ও ব্যবহার



নানা কারণেই আমাদের বিভিন্ন সময়ে দলিল ঘাঁটাঘাঁটি করতে হয়কিন্তু দলিলপত্র ঘাঁটার অভ্যাস নেই এমন লোকদের জন্য দলিলের ভাষা উদ্ধার করা সহজসাধ্য কাজ নয়কেননা, বাংলা দলিল কিংবা চুক্তিপত্রে অনেক শব্দ আছে, যেগুলোর সংক্ষিপ্ত রূপ ব্যবহার করা হয়আবার এমন সব শব্দও আছে, যেগুলো আমাদের দৈনন্দিন জীবনের কথাবার্তায় খুব কম ব্যবহূত হয় কিংবা আমাদের সঙ্গে তাদের পরিচিতি কমদলিলে ব্যবহূত এ রকম কিছু শব্দের অর্থ ও ব্যুৎপত্তি নিচে তুলে ধরা হলো

সাং = সাকিন, সাকিমসাকিন বা সাকিম শব্দের অর্থ ঠিকানা, বাসস্থান 
গং = অন্যরা, সমূহঅমুক [ব্যক্তিনাম] ও অন্যান্য বা তার সহযোগীগণযেমন: যদি লেখা থাকে আবদুল কাদের গং, তাহলে বুঝতে হবে যে আবদুল কাদেরের সঙ্গে আরও অনেকে আছেন
মোং = মোকামএর অর্থ আবাস, বাসস্থান হলেও মূলত বাণিজ্য স্থান বা বিক্রয়কেন্দ্র বোঝাতেই এটি ব্যবহূত হয়
কিঃ = কিস্তিকিন্তু শব্দটি দফা, বার, ক্ষেপ এই অর্থেও ব্যবহূত হয়
এজমালি/ইজমালি = যৌথ, সংযুক্ত, বহুজনের একত্রেযেমন: এজমালি সম্পত্তি বলতে যৌথ মালিকাধীন সম্পত্তিকে বোঝায়
কিত্তা/ কিতা = আববি ক্বত্বহশব্দজাতএর অর্থ অংশ, জমির ভাগ, পদ্ধতি 
ছানি = আরবি শব্দ, অর্থ দ্বিতীয়বারপুনর্বিবেচনার প্রার্থনাযেমন: ছানি মামলা
ছোলেনামা = মীমাংসা, আপোষ/আপসছোলেনামা মানে আপস-মীমাংসাপত্র
জঃ = জমাসাধারণ অর্থে জমাবলতে সঞ্চিত, রাশীকৃত, স্তূপীকৃত হওয়া বোঝায় কিন্তু ভূমি আইন ও দলিল-দস্তাবেজে এটি ভিন্ন অর্থ বহন করেযেমন: জমা মানে পুঁজি, মোট, খাজনা, রাজস্ব, বার্ষিক কর [হাওলার বার্ষিক জমা ১০ টাকা] আবার জমা ওয়াশিল’-এর অর্থ আয়-ব্যয়ের হিসাব; ‘জমা ওয়াশিল বাকিমানে দেয় খাজনার কত আদায় বা লভ্য খাজনার কত আদায় হয়েছে এবং কত বাকি আছে তার হিসাব; ‘জমা খারিজঅর্থ যৌথ খতিয়ানের জমা থেকে কোনো সহমালিক বা অংশীদারের আবেদনক্রমে তার অংশ আলাদা করে যে নতুন জমা ও খতিয়ান সৃষ্টি করা হয়
খারিজ = সাধারণ অর্থে বাতিল করা হয়েছে এমন বোঝায়ভূমি আইনে একজনের নাম থেকে অন্যজনের নামে জমির মালিকানা পরিবর্তন করে নেওয়াকে বোঝায়
তমঃ = তমসুকআরবি শব্দজাত, যার অর্থ দলিল, ঋণ-স্বীকারপত্র বা খতঅর্থাৎ কর্জ গ্রহীতা যে লিখিত পত্র, বিশেষত সরকারি স্ট্যাম্প বা কাগজমূলে কর্জদাতার কাছ থেকে টাকা ধার নেয়বন্ধকী তমসুক মানে হলো বন্ধকনামা বা বন্ধকী বা বন্ধকী খত
দং = দরুন, বাবদ, দখল
নিম = ফারসি শব্দএর অর্থ অল্প, অর্ধেক, অধস্তন বা অধীন ইত্যাদি
নং = নম্বর বা সংখ্যা অর্থে বোঝানো হয়
পঃ = পঞ্চম বা পাঁচের স্থানীয়
পোঃ = পোস্ট অফিস বা ডাকঘর বোঝানো হয়
মহঃ = মহকুমাব্রিটিশ আমলে জেলার একটি প্রশাসনিক অংশকেই মহকুমা বলা হতো 
মুসাবিদা = খসড়া তৈরি করামুসাবিদাকারক মানে যিনি দলিল লেখেন
হিঃ = হিসাব শব্দের সংক্ষিপ্ত রূপ
চৌঃ = চৌহদ্দিচৌহদ্দি শব্দের অর্থ হচ্ছে চারধারের সীমানা
তঃ/তপঃ = তফসিল, তহশিল 
তামাদি = ফারসি শব্দএর অর্থ নির্ধারিত সময়সীমা 
বিতং = বিস্তারিত বিবরণ, কৈফিয়ত, বৃত্তান্ত অর্থে ব্যবহূত হয়
মাং/ মাঃ = মারফতমারফত মানে মাধ্যম, অর্থাৎ যার হাত দিয়ে বা মাধ্যমে আদান-প্রদান করা হয়
সহঃ = সহকারী, যিনি কাজে সহযোগিতা করেন
সুদিখত = একশ্রেণীর বন্ধকী দলিল
হলফ = সত্য বলার জন্য যে শপথ করা হয়হলফকারী মানে যিনি সত্যায়ন করেন 

প্রথম স্ত্রীর অনুমতি ছাড়া দ্বিতীয় বিবাহ নিবন্ধন অযোগ্য


এক স্ত্রীর বর্তমানে আরেকটি বা একাধিক বিবাহ করাকে বহু বিবাহ বলেইসলামী আইনে বলা হয়েছে, কেউ যখন বস্তুগত দিক দিয়ে এবং স্নেহ ভালবাসার দিক দিয়ে প্রত্যেক স্ত্রীর সাথে সমান আচরণ করতে পারবে কেবল মাত্র তখনই সে চারটি পর্যন্ত বিবাহ করতে পারবেতবে বাস্তবে এটা কখনও সম্ভব নয়কারণ যে স্বামী নিজের স্ত্রীকে ভালবাসে তার দ্বিতীয় বিবাহ করার ইচ্ছেই হবে নাকাজেই পবিত্র কোরআন শরীফে বহু বিবাহকে অনুমতি দেবার চেয়ে একটি বিবাহ করাই উত্তম বলে উল্লেখ করেছেআমাদের সমাজে একাধিক স্ত্রী গ্রহণের আইনগত অধিকার স্বামীদের থাকলেও নারীদের ক্ষেত্রে এ ধরণের বিধান নেইএখানে উল্লেখ্য যে, একই সঙ্গে স্বামী চারজনের অধিক স্ত্রী গ্রহণ করতে পারবে না
বহুবিবাহের আর্থসামাজিক বাস্তবতা
ইসলামে বহুবিবাহের অনুমতি প্রদান করা হয়েছে ইসলাম আবির্ভাবের প্রথমদিকে একটি ভিন্ন আর্থসামাজিক ও অস্থিতিশীল রাজনৈতিক বাস্তবতায়মূলত বিধবা, এতিমদের নিরাপত্তা ও রক্ষার জন্য ইসলামে এ ধরণের প্রতিকারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে সেসময়কার পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ওহুদের যুদ্ধে বহু মুসলিম পুরুষ শাহাদত বরণ করেন, ফলে স্বাভাবিকভাবে অভিভাবক ও স্বামীহীন নারীরা চরম নিরাপত্তাহীনতা বোধ করেএসব নারীদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তার জন্য বহুবিবাহ প্রথা চালু হয়
কোরআন শরীফের বিধান
পবিত্র কোরআন শরিফের সূরা নিসায় পরিষ্কার উলেœখ রয়েছে যদি তুমি আশঙ্কা কর যে, এতিমদের প্রতি তুমি সুবিচার করতে পারবে তবে তুমি এ ধরনের নারীদের বিয়ে করতে পারো যাকে ভাল লাগে তাদের মধ্যে থেকে দুই, তিন অথবা চারকিন্তু যদি তুমি আশঙ্কা কর যে, এদের মধ্যে তুমি সুবিচার করতে পারবে না তবে তাদের মধ্যে থেকে অথবা যারা তোমার আশ্রয়ে রয়েছে তাদের মধ্য থেকে একজনকেই বিয়ে করঅন্যায় এড়ানোর এটাই সহজ ও উত্তম ব্যবস্থাএখানে সুবিচারের প্রশ্নে শুধু স্বামীর অর্থনৈতিক সচ্ছলতার সমান ব্যবহারের কথা বলা হয়নি বরং স্নেহ মায়া, ভালবাসা, আদর সোহাগের বিষয়ে পরিষ্কার উল্লেখ রয়েছেএকাধিক স্ত্রী গ্রহণের ক্ষেত্রে স্বামীরা কি আদৌ আদর সোহাগের মতো সূক্ষ্ম অনুভূতির ক্ষেত্রে ন্যায় বিচার করতে পারে? মূলত এটা অসম্ভব তাই বলা যায়, শর্তসাপেক্ষে অনুমোদন সাপেক্ষে বহু বিবাহকে কঠিন নিষেধাজ্ঞাতে পরিণত করেছে
মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ ১৯৬১
আইনের ধারা ৬ মতে, দ্বিতীয় বিয়ের ক্ষেত্রে সালিশি পরিষদের নিকট হতে অনুমতি না নিলে বিয়ে নিবন্ধন হবে নাঅনুমতির জন্য ২৫ টাকা ফি দিয়ে সাদা কাগজে চেয়ারম্যানের নিকট আবেদন করতে হবে এবং আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিয়ের অনুমতি প্রদানে যে সকল বিষয়ের প্রতি বিবেচনা করা হবে তার মধ্যে অন্যতম হলো যথাথ ১) বর্তমান স্ত্রীর বন্ধাত্য, ২) দৈহিক দৌর্বল্য, ৩) দাম্পত্য জীবন সম্পর্কিত শারীরিক অযোগ্যতা এবং ৪) দাম্পত্য অধিকার পুনর্বহালের জন্য কোন উম্মত্ততা
স্ত্রীর অধিকার লংঘনে আইনী প্রতিকার
কোন পুরুষ যদি সালিশি পরিষদের অনুমতি বিনা দ্বিতীয় বিবাহ করেন তবে তিনি অবিলম্বে তার বর্তমান স্ত্রী বা স্ত্রীদের আশু বা বিলম্বিত দেন মোহরের সম্পূর্ণ টাকা তৎক্ষণাৎ পরিশোধ করবেন এবং মোহরানার টাকা পরিশোধ করা না হলে বকেয়া ভূমি রাজস্ব আদায়ের মতো আদায় করা হবেএছাড়াও অভিযোগে দোষী সাব্যস্থ হলে ১ বৎসর পর্যন্ত জেল ও ১০,০০০ টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ড কিংবা উভয়দন্ডে দন্ডিত হবেনপাশাপাশি দন্ডবিধি আইন ১৮৬০ এর ৪৯৪ এর বিধান মতে, স্বামী যা স্ত্রীর জীবনকালে পুনরায় বিবাহ করেন তবে সে ব্যক্তি যে কোন বর্ণনার কারাদন্ডে যার মেয়াদ সাত বৎসর পর্যন্ত হতে পারে তদুপরি অর্থদন্ডে দন্ডনীয় হবেতবে একটি বিষয় পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করা উচিত, বহু বিয়ের মামলায় বাদীকে সফল হতে হলে অবশ্যই প্রমাণ করতে হবে যে, দ্বিতীয় বিয়ের সময় প্রথম বৈধ বিয়ের অস্তিত্ব ছিল
বহু বিবাহের আইনগত দিক
পরিতাপের বিষয় এই যে, বেশিরভাগ মানুষ কেউ বুঝে, অথবা কেউ না বুঝেই সূরা নিসার অপব্যাখ্যা প্রদান করেফলে সমাজে কোন কোন পুরুষ যথেচ্ছাভাবে একাধিক বিয়ের মধ্য দিয়ে পারিবারিক জীবনে মহা জটিলতার সৃষ্টি করে, যার ফলে উদ্বেগজনক প্রক্রিয়ায় বৃদ্ধি পাচ্ছে স্বামী পরিত্যক্ত নারীদের সংখ্যাএ জাতিয় পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণের জন্য ১৯৬১ সালে আইন প্রবর্তন করা হয় যা মুসলিম পাবিরারিক আইন অধ্যাদেশ ১৯৬১ নামে পরিচিতএ আইন অনুযায়ী পূর্বাহ্নে সালিশী পরিষদের নিকট হতে লিখিত অনুমতি না নিয়ে কোন পুরুষ একটি বিবাহ বলবৎ থাকাকালে আর একটি বিবাহ করতে পারবে না এবং পূর্বানুমতি গ্রহণ না করে এই জাতীয় কোন বিবাহ হলে তা মুসলিম বিবাহ ও তালাক (রেজিষ্ট্রেশন আইন ১৯৭৪ মালের ৫২ নং আইন মোতাবেক রেজিষ্ট্রী হবে না)
বিয়ের অনুমতির জন্য নির্দিষ্ট ফি জমা দিয়ে নির্ধারিত পদ্ধতিতে চেয়ারম্যানের নিকট আবেদন করতে হবে এং আবেদনপত্রে প্রস্তাবিত বিবাহের কারণ এবং বর্তমানে স্ত্রী বা স্ত্রীগণের  সম্মতি নেওয়া হয়েছে কিনা তা উল্লেখ করতে হবে
২. আবেদনপত্র পাঠাবার পর চেয়ারম্যান আবেদনকারী ও তার বর্তমান স্ত্রী বা স্ত্রীগণকে তাদের নিজ নিজ প্রতিনিধি মনোনয়ন করতে বলবে এবং সালিশী পরিষদ যদি মনে করে যে, প্রস্তাবিত বিবাহটি প্রয়োজন ও ন্যায়সঙ্গত তা  হলে কোন শর্ত থাকলে সে সাপেক্ষে প্রার্থীর বিবাহের অনুমতি মঞ্জুর করতে পারে
৩. আবেদনপত্র সম্পর্কে সিদ্ধান্তকালে, সালিশী পরিষদ এ সিদ্ধান্তের কারণ সমূহ লিপিবদ্ধ করবে এবং কোন পক্ষ নির্দিষ্ট ফি জমা দিয়ে নির্ধারিত পদ্ধতিতে নির্ধারিত সময়ে সংশ্লিষ্ট সহকারী জজের পুনর্বিচারের জন্য আবেদন করতে পারবে এবং এতে সহকারী জজের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হবে এবং এর বৈধতা সম্পর্কে কোন আদালতে প্রশ্ন উত্থাপন করা যাবে না
৪. বর্তমান স্ত্রী বা স্ত্রীগণের প্রাপ্য মুয়াজ্জল বা মু-অজ্জল দেনমোহরের টাকা তৎক্ষণাৎ পরিশোধ করবেসে টাকা ওইরূপে পরিশোধ করা না হয় তা হলে বকেয়া ভূমি রাজস্ব রূপে আদায় করা হবে
বহু বিবাহেরে ক্ষেত্রে ইউপি চেয়ারম্যান সাহেবের দায়-দায়িত্ব
১. বহু বিবাহের ক্ষেত্রে চেয়ারম্যান সাহেব স্বামীকে অনুমতি দিতেও পারে আাবার নাও দিতে পারে
২. যদি কোন স্বামী সালিশী পরিষদের মাধ্যমে অনুমতি পেয়ে যায় তাহলে চেয়ারম্যান সাহেব তাকে স্মারক নং- সহ দ্বিতীয় বিবাহের অনুমতি প্রদান করবে
৩. অনুমতি ব্যতিত স্বামী বহু বিবাহ করলে চেয়ারম্যান সাহেব তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বর্তমান স্ত্রীকে উদ্বুদ্ধ করতে পারবে
৪. সালিশী পরিষদের অনুমতি ব্যতিত কোন ব্যক্তি যদি অন্য একটি বিবাহ করে, সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাহেব ম্যাজিষ্ট্রেটের কাছে একটি অভিযোগ দায়ের করতে পারবে
বহু বিবাহের ক্ষেত্রে কাজী সাহেবের দায়-দায়িত্ব
·                       বিবাহটি বরের বহু বিবাহ কিনা তা যাচাই করবে
·                       সলিশী পরিষদের লিখিত অনুমতি আছে কিনা তা দেখবে
·                       সত্যতা যাচাইয়ের জন্য কাজী সাহেব যে কোন পন্থা অবলম্বন করতে পারে আবার সন্দেহ হলে বিবাহটি নাও রেজিষ্টি করতে পারে